সোমবার, ৭ জুন, ২০১০

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয়

নাজমুস সাকিব

বাংলাদেশের অর্থনীতির শুরুটা কোথা থেকে করা উচিত তা বলাটা কঠিন। প্রাক ব্রিটিশ সময়ের অবস্থাটা জাতীয়তাবাদী চিন্তায় ঠিক সামন্ততন্ত্র থেকে পুঁজিবাদে উত্তরনের আগের মূহুর্ত, আর মার্কসের ভাষায় স্থবির প্রানহীন এশিয়াটিক মোড অফ প্রডাকশনের যুগ। ব্রিটিশ আমলের শুরুর দিকটা ছিল চরম শোষনের। বাংলা সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী অঞ্চল হওয়ায় এখানে শোষনের মাত্রাটা ছিল আরও বেশি। তবে অবকাঠামো ও প্রযুক্তিগত সুবিধার কারনে আমরা ব্রিটিশ শাসন থেকে শেষের দিকে কিছুটা লাভবানও হয়েছি। পাকিস্তান আমলের শুরুতেই কৃষক-শ্রমিকদের মোহভংগ এবং সেই থেকে দ্বৈত অর্থনীতির চিন্তার শুরু। ক্রমাগত শোষনের ফলে স্বাধীনতার ত্বরান্বিত যাত্রা। এরপরের সরকার গুলোর পারফরমেন্সই মূলত আমাদের এই প্রবন্ধের আলোচ্য। এখানে আলোচিত হয়েছে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি, কৃষিখাত, শিল্প, সেবাখাত, বিদ্যুত, জ্বালানী, আমদানী, রপ্তানী, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, বৈদেশিক সাহায্য ও বিনিয়োগ, মুদ্রাস্ফীতি, পুঁজিবাজার, রাজস্ব ব্যাবস্থা, দারিদ্র বিমোচন ও মানব উন্নয়ন।
প্রবৃদ্ধি
প্রবৃদ্ধি হিসাব করার সময় শুধুমাত্র একটা দেশের বিভিন্ন খাতের উৎপাদন কি হারে বাড়ছে তা হিসাব করাই যথেষ্ট নয়। এর সাথে সাথে প্রবৃদ্ধির সুফল কতটা মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে তাও হিসাবের আওতায় আনা জরুরী। এটা মাপা হয় আয় বৈষম্য মাপার মাধ্যমে। দারিদ্র বিমোচন ও মানব উন্নয়ন অনুচ্ছেদে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।
প্রবৃদ্ধি হিসাব করার সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত পদ্ধতি হচ্ছে শতকরা কত হারে এ বছরে সমগ্র অর্থনীতি গত বছরের তুলনায় বেড়ে গেল। চলুন দেখা যাক বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির প্রক্ষেপন (trend) কেমন।
সাল জিডিপি %
১৯৪৯/৫০-১৯৬৯/৭০ ৩.২০
১৯৭২/৭৩-১৯৮১/৮২ ৫.১৩
১৯৮২/৮৩-১৯৮৯/৯০ ৩.৮১
১৯৯৪-১৯৯৫ ৪.৩
১৯৯৬-৯৭ ৫.৪
১৯৯৮-১৯৯৯ ৪.৯
২০০০-২০০১ ৪.৪
২০০৩-০৪ ৬.৩
২০০৫-০৬ ৬.৬
২০০৭-০৮ ৬.১৯
২০০৮-০৯ ৫.৮৮
তথ্য সুত্রঃ ড. মাহাবুব হোসেন ও এ. আর খান (১৯৮৯),মাহবুবুল মোকাদ্দেম (২০০৩), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০০৯

গ্রাফ থেকে যে ট্রেন্ডটা বোঝা যাচ্ছে তা হল সবসময়ই এটা স্বল্পমেয়াদে ওঠা নামা করলেও দীর্ঘমেয়াদে এর প্রবনতা উর্ধ্বমুখীই বলতে হবে।
বাংলাদেশের জন্য এটা দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে সবসময়ই প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক থাকে। তবে মোটা দাগে প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে বলা যেতে পারে স্বাধীনতা উত্তর প্রবৃদ্ধির হার বেশী থাকার কারণ হচ্ছে সূচনাবিন্দুর আয় (Base income) যথেষ্ট নিচু ছিল। ফলে প্রবৃদ্ধির হারও বেশী ছিল। প্রাক স্বাধীনতা (১৯৬৮-৬৯) আমলের গড় মাথাপিছু আয় ছিল ৭৪৪ টাকা (১৯৭৩-৭৪ বাজার দরে)। স্বাধীনতার পর দৃশ্যত দ্রুত গতির প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও এই পরিমান মাথাপিছু আয় অর্জন করতে আমাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৯৮০-৮১ সাল পর্যন্ত। এথেকেই বোঝা যাচ্ছে যে আসলে এই সময়ের প্রবৃদ্ধি আসলে খুব আশাব্যঞ্জক ছিলনা। যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত দেশ, দূর্ভিক্ষ এবং রাজনৈতিক উত্থান পতন ছিল এর পেছনের কারন।
১৯৮২/৮৩-১৯৮৯/৯০ এই দীর্ঘ সময়কালটি হচ্ছে স্থবিরতার সময় (A Decade of Stagnation by Abu Abdullah, UPL 1991)। এই সময়ের গড় প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩.৮১%। অর্থনীতিবিদরা অস্বচ্ছতা, দূর্নীতি, গণতন্ত্রহীনতা, পরনির্ভরশীলতার জন্য এই সময় কালের তীব্র সমালোচনামুখর।
এরপরের গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর আমলে মোটামোটি একটি স্থিতিশীল নির্ভরযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। প্রথম গণতান্ত্রিক আমলে জিডিপির আনুষঙ্গিক বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে বাজার উদারীকরণ, ভর্তুকি প্রত্যাহার এবং তুলনামূলক বেশী বৈদেশিক অর্থায়ন। দ্বিতীয় গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে অর্থনীতি ছিল মধ্য বামপন্থী, এসময় কৃষিতে ভর্তুকি বৃদ্ধি পায় এবং বৈদেশিক অর্থায়ন ছিল তূলনামূলকভাবে কম। তৃতীয় গণতান্ত্রিক আমলে (২০০৩-০৪) আমলে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশী। বৈদেশিক বিনিয়োগের কিছুটা অনুকূল পরিবেশ এই প্রবৃদ্ধির সহায়ক ছিল। বিশ্বমন্দার সময়টাতেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি যতটা কমে যাবার আশঙ্কা করা হয়ে ছিল ততটা কমেনি। এই দৃঢ়তার পেছনের কারন ছিল প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স এবং গার্মেন্টস সেক্টরের তুলনামূলক ভাল পারফরমেন্স। তবে বিনিয়োগের আস্থার পরিবেশ এই সময়টাতে (জরুরী অবস্থার সময়) ধরে রাখা সম্ভব হলে প্রবৃদ্ধি আরো বেশি হত। সর্বশেষ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৫.৮৮% যার স্থিরিকৃত বাজারমূল্য ৩,৪০৬,৫২৪ মিলিয়ন টাকা (১৯৯৫-৯৫ মূল্যে) ।
বর্তমান সরকারের রূপকল্পে ২০১৩ সালে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ৮% নির্ধারন করা হয়েছে। এই লক্ষমাত্রা অর্জনে যে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ দরকার তা দেশী বিদেশী যেকোন দিক থেকেই আসুক না কেন, তার জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয় হচ্ছে জ্বালানি সমস্যার অতি দ্রুত সমাধান।
কৃষি
সারা পৃথিবীতেই মোট জিডিপিতে কৃষির অবদান শিল্পের চেয়ে পিছিয়ে পড়ছে। ফলে যদিওবা কৃষির প্রবৃদ্ধি বাড়ে তবুও ক্রমাগত জিডিপিতে কৃষির মোট অংশ কমবে। একটি দেশের জন্য অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বাস্থ্যকর রেসিপিটা হচ্ছে প্রথমে কৃষি বিপ্লবের সম্পুরক হিসেবে শিল্পায়নের পত্তন এবং পরবর্তীতে শিল্পের স্থিতিশীল অগ্রগতি এবং এর পিছে পিছে সেবা খাতের বিকাশ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কৃষি বিপ্লবের সম্ভাবনা আটকে গেছে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের ব্যর্থতার মুখে। এরপর শিল্পায়নের ধকটা ভালভাবে আয়ত্ত হবার আগেই সেবাখাতের দিকে অর্থনীতি হাঁটা শুরু করেছে।
আসুন দেখা যাক, আমাদের জিডিপিতে কৃষির পারফরমেন্স কেমনঃ

তথ্যসূত্রঃ ড. মাহাবুব হোসেন ও কাজী শাহাবুদ্দিন, ১৯৯৭
এই তথ্য আমাদের পূর্বের হাইপোথিসিস কেই প্রমাণ করছে। বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষির আপেক্ষিক অবদান সূচকীয় (exponential) হারে কমছে। কিন্তু এরকম হবার অবশ্যম্ভাবিকতাটি কী? এর পেছনের মূল কারণ হচ্ছে ভূমির পরিমাণ নির্দিষ্ট এবং জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। তাই এই বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার চাহিদা পূরনে প্রকৃতি নির্ভর কৃষির উপর নির্ভর করা যাচ্ছেনা। ফলে শিল্পায়ন অনিবার্য হয়ে উঠছে।
এতো গেল জিডিপিতে কৃষির অবদানের কথা। কৃষির অভ্যন্তরীন (compositional) বিন্যাসও দারুনভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। নিচের ডাটা থেকে ব্যাপারটা পরিস্কার হবেঃ



১৯৯০-৯১
জিডিপিতে কৃষির মোট অবদান ৩৭.৬%
কৃষিতে শস্যের % হার ৬৬.৭%
কৃষিতে বনজ সম্পদের % হার ১১%
কৃষিতে গবাদি পশুর অবদান ১১.১%
কৃষিতে মৎসের অবদান ১১.২%

২০০৭-০৮2200 ২০০৭-০৮
জিডিপিতে কৃষির মোট অবদান ২১.৯%
কৃষিতে শস্যের % হার ৫৫%
কৃষিতে বনজ সম্পদের % হার ১৩%
কৃষিতে গবাদি পশুর অবদান ১০%
কৃষিতে মৎসের অবদান ২৩%






তথ্যসূত্রঃ বিভিন্ন কৃষি শুমারি
এখান থকে দেখা যাচ্ছে ক্রমাগত আমরা শস্য থেকে অন্যান্য দিকে বিশেষত মাছের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছি। এছাড়া আমরা একফসলী প্রবনতার দিকে এগোচ্ছি। আগে শুষ্ক মৌসুমে যেসব রবি শস্য, পাট উৎপাদন করা হত তার বদলে ঊফসী ধান করা হচ্ছে। এতে ডালের যোগান কম হচ্ছে এবং চাহিদা মেটাতে ডাল আমদানী করতে হচ্ছে; ফলে দাম যাচ্ছে বেড়ে। এতে গরিবের প্রোটিনের ঘাটতি বাড়ছে।
বাংলাদেশের কৃষির জন্য অত্যাবশ্যকীয় বিষয় হচ্ছে উৎপাদন উপকরন বাজার রেগুলেশনের আওতায় রাখা, সেচের জন্য বিদ্যুত এবং ডিজেল সরবরাহ নিশ্চিত করা, পরিবেশ বান্ধব এবং দেশী জাতের প্রাধান্য রক্ষা করে এমন প্রযুক্তিগত গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো এবং সমতাভিমুখী প্রবৃদ্ধির জন্য অবশ্যই ভূমি সংস্কার ও আবাদ যোগ্য জমির সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা।
শিল্প ও সেবা খাত
স্বাধীনতার পরপর তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য সব দেশের মতই আমাদের সরকারও জাতীয়তাবাদী চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শিল্পের জন্য সংরক্ষনশীল নীতি অনুসরন করে। প্রত্যক্ষ পদ্ধতি যথা লাইসেন্সিং, কোটা, নিষিদ্ধ পন্য ইত্যাদির মাধ্যমে এবং পরোক্ষভাবে যেমন ট্যারিফ, বৈদেশিক বিনিময় নিয়ন্ত্রন, ঋণদান পদ্ধতি ইত্যাদির মাধ্যমে দেশি শিল্পকে রক্ষার চেষ্টা করে। এছাড়া শিল্পের জন্য প্রনোদনা ও সহায়ক ব্যবস্থাও গ্রহণ করে। শিশু অবস্থার জন্য এই পদ্ধতি সঠিক হলেও একটা সময়ে এসে শিল্পকে নিজের পায়ে দাঁড়ানো শিখতে হয়, কিন্তু আমাদের দেশে নানা প্রতিবন্ধকতার কারনে বিশেষত মধ্য ৮০’র দশকে পরনির্ভর অর্থনীতির কারনে এই শিশু শিল্প দামড়া শিশুতে পরিনত হয়। এছাড়া শিল্পের বেসরকারীকরনের সময় ব্যাপক দূর্নীতি এবং অদক্ষতাও শিল্পখাতে অব্যবস্থার কারন। বর্তমানে শিল্পের প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৬%। শিল্পের মোট মূল্য (১৯৫-৯৬ সালের স্থির মূল্যে) প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী জিডিপিতে শিল্পের অবদান ১৭.৭৮%। বর্তমান সরকারের রূপকল্প অনুযায়ী ২০২১ সাল নাগাদ এই প্রবৃদ্ধি ৪০ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। আমাদের শিল্পের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অংশ গার্মেন্টস এ আরো অনেক বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা একারনে রয়েছে যে সবচেয়ে বড় রপ্তানীকারক চীন খুব শীঘ্রই অন্যান্য শিল্পের দিকে সুইচ করবে এবং চীনের মজুরীও বাড়তির দিকে। তাই বাংলাদেশের বিদ্যুত, গভর্নেন্স সমস্যা এবং অবকাঠামোর সমস্যার সমাধানের দিকে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহন করলেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করে বাংলাদেশ প্রচুর বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারে।
সেবাখাতের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে অগ্রগতি করেছে মোবাইল ফোন সেক্টর। তবে বাজারের আকৃতির সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছানোর কারনে এই প্রবৃদ্ধি স্বাভাবিক ভাবেই ক্রমহ্রাসমান। এছাড়া পর্যটন, হোটেল,এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি, রেস্তোরা, ইত্যাদি হচ্ছে কয়েকটি বিকাশমান সেবাখাত। ২০০৭-০৮ অর্থবছরের জন্য জিডিপিতে সেবা খাতের মোট অবদান ৫২.৩৩%।
মোবাইল টেলিফোনের অগ্রগতির চিত্র
সাল প্রবৃদ্ধি গ্রাহক সংখ্যা
২০০৪ ১১৭.৫৭% ৪১৫০৭৮৭
২০০৫ ১২৩.৩১% ৯২৬৯০৯৫
২০০৬ ১২৪.৪৪% ২০৮০৩৬৯৬
২০০৭ ৬৫.২৫% ৩৪৩৭৮৬৫৮
২০০৮ ৩৫% ৪৩৭০০০০০
তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০০৯

বিদ্যুত ও জ্বালানী
যেকোন বিচারেই বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুত ও জ্বালানি সমস্যা। মোটামোটি ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত ঘাটতি নিয়ে আমরা সকল খাতেই খোঁড়াচ্ছি। বাংলাদেশের বর্তমান বিদ্যুত সংকট এত তীব্র, অথচ দেশের মাত্র ৪৪ শতাংশ মানুষ বিদ্যুত সুবিধার আওতায় এসেছে। তাই সবাইকে বিদ্যুত সেবার আওতায় আনা হলে এই সঙ্কট আরও ঘনীভূত হবে।
এখন গড় উৎপাদন ৩০০০ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। নতুন কেন্দ্র চালু হলেও পুরানো কেন্দ্র গুলোর উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার ভারতের সাথে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের যে চুক্তি করেছে তার সুফল পেতে ২০১২ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ততদিনে যে ঘাটতি দাঁড়াবে তাতে এই বিদ্যুত খুব বেশি সুফল আনবে না। সরকার রাশিয়ার সাথে যৌথভাবে একটি পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা করছে। এখান থেকে ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসবে। চালুর অপেক্ষায় রয়েছে যেসব বিদ্যুত প্রকল্পঃ
সিদ্ধিরগঞ্জ পিকিং প্লান্ট-২ ১২০ মেগাওয়াট, শিকলবাহা পিকিং প্ল্যান্ট ১৫০ মেগাওয়াট, ফেঞ্চুগঞ্জ সিসিপিপি ৯০ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জ (ভাড়াভিত্তিক) ৫৫ মেগাওয়াট, ফেঞ্চুগঞ্জ (ভাড়াভিত্তিক) ৫০ মেগাওয়াট, বগুড়া (ভাড়াভিত্তিক) ২০ মেগাওয়াট, সিলেট ১৫০ ও চাঁদপুর ১৫০ মেগাওয়াট
ক্রয় কমিটিতে অনুমোদনের পর চুক্তি হয়েছে বা চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেঃ
ভেড়ামারা ১০০ মেগাওয়াট, ঠাকুরগাঁও ৫০ মেগাওয়াট, নোয়াপাড়া ১০০ মেগাওয়াট, বরিশাল ৫০ মেগাওয়াট, গোপালগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট, বেড়া ৭০ মেগাওয়াট, সান্তাহার ৫০ মেগাওয়াট, কাঁটাখালী ৫০ মেগাওয়াট, দোহাজারি ১০০ মেগাওয়াট, হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট, বাঘাবাড়ী ৫০ মেগাওয়াট, ফরিদপুর ৫০ মেগাওয়াট, দাউদকান্দি ৫০ মেগাওয়াট।(সূত্রঃ প্রথম আলো ২৯-০৩-২০১০)
তবে আমাদের যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি মনযোগী হওয়া দরকার তা হল সৌর বিদ্যুত। একথা সত্য যে এর প্রাথমিক খরচ খুব বেশি। কিন্তু এর চলার জন্য আলাদা কোন খরচ লাগেনা এবং বাংলাদেশে যে পরিমান সূর্যালোক পতিত হয় তার মাত্র ০.০৭% ব্যবহার করেই বাংলাদেশের বিদ্যুত চাহিদা মিটিয়ে ফেলা সম্ভব।
গ্যাস অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে এজন্য যে, এটা অন্যান্য স্ট্র্যাটেজিক খাতের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশে এখন ১৭ টি গ্যাস ক্ষেত্র চালু আছে। সর্বশেষ অর্থবছরের হিসেব অনুযায়ী গ্যাস উৎপাদন হয়েছে ৬০০.৮৬ বিলিয়ন কিউবিক ফুট। এর মধ্যে বিদ্যুত এবং ক্যাপ্টিভ বিদ্যুতের জন্য ব্যায় হয়েছে ২৩৪.২৮ বিলিয়ন ও ৮০.৯৩ বিলিয়ন ফুট। সারের জন্য ব্যায় হয়েছে ৭৮.৬২ এবং শিল্পের জন্য ব্যায় হয়েছে ৯২.১৯ বিলিয়ন বিদ্যুত। শিল্পের জন্য বিদ্যুত ব্যবহারের প্রবনতা দেখে শিল্পায়নের হার সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পাওয়া সম্ভব।
মজুদ গ্যাসের প্রাক্কলিত পরিমান ১৫.৪১ টিসিএফ যা বর্তমান হারে ব্যবহৃত হতে থাকলে ২০১৫ সালের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবার কথা। একদিকে আমাদের তীব্র জ্বালানী সংকট চলছে অন্যদিকে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধান ও তা থেকে উৎপাদন ব্যহত রয়েছে। আবার তীব্র ঘাটতি সত্ত্বেও কেউ কেউ বিদেশে গ্যাস রপ্তানীর বুদ্ধি দিচ্ছেন!
নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে আরো গবেষনা এবং প্রায়োগিক উদ্যোগ ছাড়া জ্বালানী সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধান সম্ভব নয়। এছাড়া আঞ্চলিক সহযোগিতাও জ্বালানী নিরাপত্তার জন্য অত্যাবশ্যকীয় বিষয়।


আমাদানী-রপ্তানী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান
সর্বশেষ অর্থনৈতিক জরীপ অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট আমদানীর পরিমান হচ্ছে ২৫২০৫ মিলিয়ন ডলার এবং রপ্তানী ১৫৮৬৪ মিলিয়ন ডলার। বাণিজ্য ঘাটতি -৯৩৫৮.২ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি রপ্তানী করে যুক্তরাষ্ট্রে ২১৫১৪৬৫ মিলিয়ন টাকা এবং আমদানী করে সবচেয়ে বেশী চীন থেকে ২৬৮৮৯০ মিলিয়ন টাকা। সবচেয়ে বেশী আয় হয় তৈরী পোশাক রপ্তানী থেকে। বাংলাদেশের প্রধান আমদানী পন্য গুলোর শ্রেণী বিভাগ হচ্ছেঃ
ক) খাদ্য শস্যঃ চাল গম ও অন্যান্য শাক সবজি
খ) অন্যান্য খাদ্য দ্রব্যঃ তেল, তৈলবীজ, দুগ্ধ, তামাক,মদ ও অন্যান্য পানীয়
গ)খনিজঃ খনিজ তেল, কেরোসিন, সাদা সিমেন্ট
ঘ)যন্ত্রপাতিঃ ভারী যন্ত্র, স্পেয়ার পার্টস, বিভিন্ন স্থল-জল-আকাশ পরিবহন
ঙ) অন্যান্যঃ সার, রাসায়নিক, চামড়া, কাগজ তৈরির মন্ড, সুতা, জুতা,ধাতু ইত্যাদি
রপ্তানী দ্রব্যগুলো প্রধানত দু’ধরনেরঃ
১) চিরায়ত পন্যঃ পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য, চা, নিউজপ্রিন্ট
২) অ-চিরায়ত পন্যঃ তৈরী পোষাক, চিংড়ি মাছ, ইউড়িয়া, বাইসাইকেল, পেট্রোলিয়াম এবং আরো কিছু ক্রমবর্ধিষ্ণু ছোট পন্য
রপ্তানীতে আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় দূর্বলতা হচ্ছে এটি মনো এক্সপোর্ট দেশ। কোন কারণে গার্মেন্টসের চাহিদায় বা উপকরন সরবরাহে কোন সমস্যা হলে সম্পূর্ণ রপ্তানী খাতে ধ্বস নেমে আসতে পারে। অবশ্য সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও আমাদের গার্মেন্টস শিল্প যথেষ্ঠ সক্ষমতা দেখিয়েছে।
অর্থনৈতিক মন্দার সময়েও বাংলাদেশ যে অসাধারন পারফরমেন্স দেখিয়েছে তার পেছনের বড় কারন হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। ২০০৮-০৯ এর রিভাইসড হিসাব অনুযায়ী রেমিটেন্স এর পরিমান ৯৬৮৯.২৬ মিলিয়ন ডলার। এর ফলে ২০০৮-০৯ এর বছর শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৭৪৭০.৯৬ মিলিয়ন ডলার। যা ২০০৭-০৮ সালে ছিল ৬১৪৮.৮২ মিলিয়ন ডলার। নিসঃন্দেহে বিশ্বমন্দার সময় রেমিটেন্সের এই উর্ধ্বমুখি প্রবনতা আশাব্যঞ্জক।
বৈদেশিক সাহায্য ও বিনিয়োগঃ
২০০৮-০৯ সালে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল ৯৪১ মিলিয়ন ডলার। এই সময়ে নেট বৈদেশিক সাহায্য হচ্ছে ১০২২.৮৩ মিলিয়ন ডলার। সাধারনত বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়, নতুন টেকনলজী প্রাপ্তি, প্রবৃদ্ধি ত্বরান্তিত করা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির আশায় বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রশংসা করা হয়, কিন্তু দেখা যাচ্ছে ২০০৯ সালের শেষে আমাদের দেশের ব্যংকগুলোর মোট তারল্যের পরিমান ৮০১২৮.৬০ কোটি টাকা। সুতরাং সঞ্চয় বিনিয়োগ ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা আদৌ নেই। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দেখতে হবে যে বিনিয়োগ কি শ্রমঘন হচ্ছে নাকি পুঁজি ঘন হচ্ছে। ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস এর কারনে টেকনলজি ট্রান্সফার আদৌ সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া সাধারনত বিদেশী বিনিয়োগ আসে এবং মুনাফা করে আবার চলে যায়। পুনঃবিনিয়োগ খুব কম ক্ষেত্রেই হয়। তাই নেট ইনফ্লো না দেখে বলা যাবেনা যে আসলে আমাদের কেমন লাভ হচ্ছে। জনগুরুত্বপূর্ন খাত এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষেত্রে বৈদেশিক বিনিয়োগ অত্যন্ত স্পর্শকাতর। বৈদেশিক বিনিয়োগ সাধারনত Back to Back LC পদ্ধতিতে হওয়ার কারনে আমাদের ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠছে না। উপরন্তু নানা শর্তের কারনে। বিদেশি কন্সাল্টেন্টদের পেছনে উচ্চাভিলাষী খরচ করতে আমাদের উদ্যোক্তারা বাধ্য হচ্ছে।
বৈদেশিক সাহায্যের ফলে বিভিন্ন আপদকালীন জরুরী অবস্থা মোকাবিলা করা গেলেও এটা একটা পরনির্ভরশীলতা তৈরী করে। আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনার মাত্র ৮% বাস্তবায়ন হয় বৈদেশিক সাহায্য দিয়ে। অথচ সর্বদা এমন এক জুজু আমাদের তারা করে যে এটা ছাড়া আমরা যেন এক পাও চলতে পারিনা। অপরদিকে আমাদের সকল নীতিপ্রনয়নে দাতাগোষ্ঠী নাক গলানোর চেষ্টা করছে। স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট পলিসি, পিআরএসপি ইত্যাদির মাধ্যমে তারা আমাদের ব্যায়ের খাত সংকীর্ণ ও নির্দিষ্ট করে দিচ্ছে। তাছাড়া বৈদেশিক সাহায্যে দানের পরিমানও ক্রমহ্রাসমান, বেশিরভাগই এখন ঋণ আকারে আসছে এবং এই ঋণও পরিশোধ করতে হচ্ছে চড়া সুদেঃ
সাল সাহায্যে দানের শতকরা পরিমান
১৯৭২-৭৩ ৯০%
১৯৭৯-৮০ ৫৩%
১৯৯৬-৯৭ ৪৯%
২০০১-০২ ৩৭%
২০০৭-০৮ ৩৩%
তথ্যসুত্রঃ মাহাবুবুল মোকাদ্দেম (২০০৩)
এছাড়া নেট ডিসবার্সড এইডের মধ্য থেকে সুদ পরিশোধ ও দেনা আদায় শেষে নেট এইডের পরিমান ক্রমাগত কমছে। ১৯৭৩-৭৫ সালে এটা ছিল শতকরা ৯৫% আর ২০০২ সালে এটা কমে হয়েছে ৫৯%।

মুদ্রাস্ফীতি, পুঁজিবাজার ও রাজস্ব ব্যবস্থা
বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতিটা বরাবরই খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ওঠা নামা করে। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরের স্থিরিকৃত মূল্যে গত কয়েক বছরের মুদ্রাস্ফীতি দেখা যাকঃ
সাল মুদ্রাস্ফীতি খাদ্যমূল্য স্ফীতি
২০০৬-০৭ ১৭৬.০৬ ১৮৪.১৮
২০০৭-০৮ ১৯৩.৫৪ ২০৬.৭৯
২০০৮-০৯ ২০৬.৪৩ ২২১.৬৪
সূত্রঃ বাংলাদেশ ব্যাংক
উপরের ডাটা থেকে দেখা যাচ্ছে সবসময়ই খাদ্যমূল্য সাধারণ মুদ্রাস্ফীতির চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। অন্যান্য মূল্য হঠাৎ বেড়ে গেলেও কমার নজীর রয়েছে। কিন্তু খাদ্যদ্রব্যের দাম একবার বাড়লে খুব কম সময়ই তা কমে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এখনও শক্ত কোন খুঁটির উপর দাঁড়াতে পারেনি। তবে উত্তরোত্তর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। বাজারের আয়তন যথেষ্ঠ ছোট। এর কারন হচ্ছে পন্য ও সেবা বাজারে ক্রিয়াশীল বিদেশী কম্পানীগুলোর অনুপস্থিতি। ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী শেয়ার বাজারের মোট মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন হচ্ছে ১৮৮৪৪৯.৩০ কোটি টাকা যা তার আগের বছরের তুলনায় ১৭৭.৮% বেশি।
বাংলাদেশের গত ২০০৯-১০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার ছিল ৯৪,১৪০ কোটি টাকা যা জিডিপির ১৫.৩%। এডিপির (সংশোধিত) আকার ছিল ২৩,০০০ কোটি টাকা যা জিডিপির ৩.৭%। ২০০৮-০৯ অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেট ঘাটতি ছিল জিডিপির ৪.১%; এর মধ্যে ২.৩% এর অর্থায়ন ছিল নিজস্ব এবং ১.৮% ছিল বিদেশী অর্থায়ন। ২০০৯-১০ অর্থবছরের এডিপির আকার হচ্ছে ৩০,৫০০ কোটি টাকা যা জিডিপির ৪.৪%।

দারিদ্র বিমোচন ও মানব উন্নয়ন
বাংলাদেশের দারিদ্র হচ্ছে একটি অন্যতম মুখরোচক বিষয়। বাংলাদেশের দারিদ্র বিমোচনের বিভিন্ন মডেল নিয়ে বিশ্বব্যপী বিভিন্ন আলোড়ন সৃষ্টি হলেও ২০০৫ সালের হিসেব অনুযায়ী দেশের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশই দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। বৈষম্য মাপা হয় গিনি কোএফিশিয়েন্ট (Gini Coefficient) দিয়ে। গিনির মান শূন্য থেকে একের মধ্যে হতে পারে। শূন্যমান বৈষম্যহীনতা এবং এক সর্বোচ্চ বৈষম্য নির্দেশ করে। ২০০৯ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের গিনির মান হচ্ছে ০.৪৭।
অন্য দিকে মানব উন্নয়ন সূচকে ২০০৭-০৮ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৪০ তম এবং মানব উন্নয়ন সূচকের মান ছিল ০.৫৪ যেখানে প্রতিবেশী দেশগুলোর মান ছিল ভারত ০.৬১, পাকিস্তান ০.৫৫, শ্রীলঙ্কা ০.৭৪। এইমান ১ এর কাছাকাছি হলে সবচেয়ে ভাল মানব উন্নয়ন সূচক নির্দেশ করে।
দারিদ্র পরিমাপের ক্ষেত্রে এখন Cost of Basic Needs –CBN পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে শুধু ক্যলরী হিসেব না করে এর সাথে খাদ্য বহির্ভূত ভোগ্য পন্য অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। মাথা গণনা পদ্ধতিতে ২০০৫ সালে প্রত্যক্ষ ক্যলরি গ্রহণ (DCI) পদ্ধতিতে জাতীয় পর্যায়ে চরম দারিদ্র ছিল ১৯.৫% এবং অনপেক্ষ দারিদ্র ছিল ৪০.৪%। পল্লী অঞ্চলে এটার হার ছিল ৩৯.৫% এবং শহরাঞ্চলে তা ছিল ৪৩.২%। ২০০০ সালে দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী জনগনের সংখ্যা ছিল ৫৫.৮ মিলিয়ন যা ২০০৫ এ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৬ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। নিচের পরিসংখ্যান থেকে বাংলাদেশের দারিদ্র প্রবনতা দেখা যায়।


সসসাস ১৯৯১/৯২ ১৯৯৫/৯৬ ২০ ২০০০
জাতীয় ৫৮.৮৪% ৫১.৯% ৪৯.৮%
গ্রামীন ৬১.১৯% ৫৫.২% ৫৩%
শহুরে ৪৪.৮৭% ৪৯.৪% ৩৬%
তথ্যসূত্রঃ বিবিএস
ডাটা থেকে দেখা যাচ্ছে যে দারিদ্র কমার হার অত্যন্ত শ্লথ। দারিদ্র বিমোচনের মূলত ৩ ধরনের কৌশল বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয়েছেঃ
ক) গতানুগতিক কৌশল এই কৌশল মূলত নয়া উদারনৈতিক অর্থব্যবস্থার একটি ব্যবস্থাপত্র। বাংলাদেশে এই কৌশল বাস্তবায়িত হয় Poverty Reduction Strategy Paper (PRSP) এর মাধ্যমে। এর উদ্যোক্তারা মনে করে প্রবৃদ্ধিই হচ্ছে দারিদ্র বিমোচনের সর্বোত্তম কৌশোল এবং বৈষম্য যতই হোক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে কিছুটা সুফল দরিদ্র জনগোষ্ঠী পাবেই। এছাড়া অর্থনৈতিক আদর্শের চিন্তার ক্ষেত্রে তারা মনে করেন শ্রমবাজারের গঠনগত কারনে কিছু লোক অবশ্যই দরিদ্র থাকবে।
খ) সংস্কারবাদী কৌশল
এই কৌশল কিছু সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্ঠনী, সামাজিক ব্যবসা তথা এনজিও ইত্যাদির মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করতে চায়। এরা কিছু নির্দিষ্ট গ্রুপ ভিত্তিক কাজ যেমন কাজের বিনিময়ে খাদ্য, শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য, ভিজিএফ, ক্ষুদ্র ঋণ ইত্যাদির মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন সম্ভব বলে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এই কৌশল সবচেয়ে সফল।তবে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি মূলত চরম দরিদ্র ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি কেননা, তারাই ক্ষুদ্র ঋণ পায় যারা উদ্যোক্তা হওয়ার সামর্থ রাখে।
গ) বৈপ্লবিক কৌশল
এই কৌশলের প্রবক্তারা মনে করেন ভূমি, পুঁজি এবং জ্ঞানের অসম বন্টন ব্যবস্থা জিইয়ে রেখে দারিদ্র বিমোচন আদৌ সম্ভব নয়। এজন্য তারা মনে করেন সর্বাগ্রে প্রয়োজন ভূমি সংস্কার এর সাথে উৎপাদন উপকরন বাজারের সংস্কার। এরা মনে করেন এনজিও গুলোকে গরীবের কর্পোরেশনে পরিণত করতে হবে। এছাড়া সামাজিক স্টক এক্সচেঞ্জের ধারণাও এদেরই অবদান। এরা মনে করেন চীনের পরিবার দায়বদ্ধতা মডেলের মত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর এক তৃতীয়াংশ মালিকানা শ্রমিকদের দিয়ে দেয়া যেতে পারে চুক্তির ভিত্তিতে। ফলে উদ্দ্বৃত্ত মুনাফা শ্রমিকরা পাবে। এরা মধ্যসত্ত্বভোগী দূর করতে উৎপাদক ও ভোক্তার আলাদা আলাদা সমবায় গড়ে তোলার পক্ষপাতি। এবং সবশেষে তারা প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা এবং মূদ্রা ব্যবস্থাপনার গুনগত পরিবর্তন চান যাতে দরিদ্ররা মূলধনের দেখা পায়।

শেষ কথা হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে মানব সম্পদ। সেই সাথে রয়েছে সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক সম্পদ ও প্রাণ বৈচিত্র। মানব সম্পদে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক ও আপেক্ষিক উভয় সুবিধাই রয়েছে। সমন্বিত প্রয়াস এবং জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সকল নাগরিকের জন্য নূন্যতম শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হলে অমর্ত‌্য সেনের তত্ত্ব অনুযায়ী আমাদের দেশের মানুষ নিজেরাই নিজেদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যত রচনা করতে পারবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন